জনরোষ বনাম জনচেতনা
মহম্মদ ঘোরী শাহ্
কিছুদিন পূর্বের ঘটনা।রাস্তার পপাশেই একটা গ্রামের মধ্যে প্রচণ্ড হৈ হল্লা চলছে।যাত্রা থামিয়ে সেইদিকে একটু এগিয়ে দেখলাম,শ' খা
নেক লোক দাঁড়িয়ে কিছু দেখছে হাত নাড়ছে ও চেঁচামিচি করছে।আর বেশকযেক জন মিলে একটা ঘন ভীড় তৈরী করেছে।শুনলাম একজন ছেলেধরা ধরা পড়েছে,আর ঐ ঘন ভীড়টার মধ্যেই তার গনপিঠুনি চলছে।ভীড়ের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় পরিচিত যুবককে দেখে তাদের কাছে গিয়ে বললাম, কি হচ্ছে এ সব? ছেলেধরা তো পুলিশে দে।এমন সময় এক মহিলা চিৎকার করে বলছে, না ছেলেধরা নয়! ও পশ্চিমের কবিরাজ।তখন পরিচিত যুবকদের আবার বললাম,কিছু একটা কর! লোকটাকে বাঁচা,নইলে গ্রামের দুর্নাম হবে।তবে যুবকগুলো বিশেষ কায়দায় নিজেদের জীবন বাজি রেখে ভীড়ে মধ্য থেকে লোকটিকে অর্ধমৃতবস্থায় অনত্র সরাতে পেরেছিল।দেখলাম, পাকাচুল ও পাকাদাঁড়ি রক্তে লাল হয়েগেছে,পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিটা ছিঁড়ে গেছে।
এ যাত্রায় কবিরাজ রক্ষা পেলেও অসম,ত্রিপুরা,মনিপুর ও মহারাষ্ট্রে তারা জনরোষ হতে রক্ষা পায় নি। মানসিক ভারসাম্য হীন, ভিখারী কিম্বা ভীন রাজ্যের মজদুর যে'ই হোক না কেন জনরোষ ছেলেধরার দোহাই দিয়ে একের পর এক খুন হয়েই চলছে।
এ পর্যন্ত সারাদেশে ত্রিশটিরো বেশি গনপিটুনি দ্বারা হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে।প্রত্যেকটি ঘটনার টার্গেট একই প্রকার।অনেকেই মনে করছেন,এই ঘটনায় যারা খুন হয়েছে তাদের বেশির ভাগেরই পোষাক পরিচ্ছদ সংখালঘু ও দলিতদের মত,বা কোন ক্ষেত্রে তাদের দাঁড়িও ছিলা।সুতরাং জনরোষের লক্ষ্যবস্তু যে নিদ্দিষ্ট এটা বলাযেতে পারে।আর এই জনরোষের লক্ষ্যবস্তুর প্রকৃতি কে বিশ্লষণ করলেই এর উৎসস্থল যে কোথায় তা সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু কেন এই জনরোষ? কাদের বা'ই এই রোষ? এ পর্যন্ত সমগ্র ভারতে ছেলে বা শিশু হারিয়ে গেছে বা ছেলেধরায় গুম করেছে এমন একটিও অভিযোগ থানায় নথিভুক্ত হয়নি এবং গনমাধ্যমেও উঠে আসে নি।তাই এই সময় উপরোক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর খুঁতেই হবে।
এখানে অন্য একটি বিষয়ের আলোচনা খবই প্রাসঙ্গিক,তা হল গোরক্ষকদের জনরোষ।এই দুটি জনরোষের গতি প্রকৃতি একই।উদ্দেশ্যটাও যে এক নয় তা কে বলতে পারেন? আমরা দেখেছি জনসাধারণের মধ্য থেকে গোরক্ষক হিসাবে কিছু মানুষকে চয়ণ, নির্ভয় প্রদান এবং তাদের মানসিক প্রেক্ষাপট তৈরীর ধারাবাহিক ভূমিকা রেখেছে একটি নিদ্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ। সেই রাজনৈতিক উৎস হতে ক্রমাগত উস্কানিতে গোরক্ষকদের মস্তিষ্কথেকে আইন- শৃঙ্খলার বিষয়টি বিলীন হতে থাকে।ফলস্বরূপ গো তাণ্ডবে প্রাণ হারাতে হয় বহু মানুষকে।অনেকেই ভাবছেন, এই প্রক্রিয়ারই সহজাত প্রতিফলন হল কথিত ছেলেধরা নামের হত্যাকাণ্ড গুলো।
সবাই তো এতটুকু জানেন, খুন জঘন্যতম আইনগত অপরাধ।কেউ যদি ছেলে ধরে অপরাধ করে থাকে তাকে অাইনের হাতে সোপর্দ করা তো নাগরিকদের কর্তব্য।কিন্তু এই ঘটনা একটিও ঘটেনি, যেটা ঘটেছে তা হল হত্যা।আজ যখন গুজব রটানোর বিরুদ্ধে গুজব রটানোর অভিযোগ উঠছে তা নিশ্চয় স্বাগত,কিন্তু যে সব প্রচার বা প্রচারক রাজনৈতিক স্বার্থে জনচেতনায় আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রেরণা জোগালেন তাদের বিরুদ্ধে অাঙুল উঠবে কখন?
Comments