'সিঙ্গেল'
অনেক দিন পর যাচ্ছি টুরে। মনের মধ্যে ভীষন আনন্দ হচ্ছে। ট্রেন জার্নি আমার বেশ ভালোই লাগে। জানালার পাশে বসার জায়গা পেয়েছি, সাথে কানে হেডফোনে গান শুনতে শুনতে যাচ্ছি। ও হ্যাঁ, আমার পরিচয় দেওয়া হয় নি। আমি অর্নব রায়। দশটা-পাঁচটা সরকারী কর্মচারী। ব্যাচেলর লাইফ এনজয় করছি।
আমার পাশের দুটো সিট তখনও খালিই আছে। ভাবছি ভালো একজন সহযাত্রী পেলে মন্দ হয় না। একটু পরেই মেঘ না চাইলে জলের মতই এক সুন্দরী তরুণী আর তার পরিবার নিয়ে এই কামরাতেই উঠে এলো। তরুণী আমার পাশে খালি জায়গাটাতেই এসে বসল। আমি তার দিকে তাকিয়েই ছিলাম। পরে মনে হলো, মহিলাদের তো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সব কিছু আগে ভাগেই বুঝতে পারে। তাহলে আমার এই চাউনি সে বুঝেছে। অতএব চোখ সরিয়ে নিলাম যাতে আমার ভদ্র ইমেজ নষ্ট না হয়। কিন্তু বারবার তার দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল। মেয়েটার পরনে সবুজ কুর্তি,ভীষন মিষ্টি দেখতে। চোখ দুটো দীঘল আর ঠোঁটের নীচে তিল রয়েছে। যেটা তাকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়। অনেক্ষণ পর মেয়েটা বলল, "আমাকে জানালার পাশের সিটটা দেবেন?"
আমি ইতস্তত করে বললাম, "আচ্ছা দিচ্ছি একটু পর।"
সে "আচ্ছা" বলে চুপ করে গেল।
এ মেয়ের চোখ নিয়ে কবিতা লিখে ফেলা যায় অনায়াসে সত্যি, যদি কবি হতুম তো লিখেই ফেলতুম। কিছুক্ষণ পর দেখি মেয়টা ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে সেই যে পড়তে শুরু করল, তো আর যেন তার কোনোও দিকে খেয়াল নেই। এই স্মার্ট ফোনের যুগে কাউকে পাতা উল্টে বই পড়তে দেখলে বেশ ভালোই লাগে। বিশ্বাস করুন, অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল। মেয়েটি কি অবিবাহিতা, নাকি বিবাহিতা? কী জানি। বিবাহিতা হলে বর নিশ্চয় একা একা ছাড়ত না এমন মিষ্টি মেয়েটাকে। তবে কী বয়ফ্রেন্ড আছে?
আমি এসব কী ভাবছি? মেয়েটির মা আমার উল্টোদিকের সিটে বসে আছে। আমি কী করি,কোথায় বাড়ি এসব জিজ্ঞেস করল। বেশ খানিকটা আলাপ জমল ওদের সাথে। অনেকটা পথের শেষে ওদের নামার পালা চলে এলো। আমি শেষমেশ ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম।
ওরা নেমে যাওয়ার পর ফেসবুকে ওর নাম লিখে খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম। প্রোফাইলে গিয়ে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস টা সবার আগে দেখলাম। যাক 'সিঙ্গেল' এখনোও। বিশ্বাস করুন, ভীষণ আনন্দ হলো। চাকরি পাওয়ার খবর পেয়েও বোধহয় এতটা আনন্দিত হইনি যতটা স্ট্যাটাস টা "সিঙ্গেল" দেখে হলাম। কথাটা ভাবতে গিয়েই মনে মনে একটু হেসে নিলাম। সঙ্গে সঙ্গে রিকু।
এইতো পুরো পেজ জুড়ে বইয়ের জগৎ। এটা তো আমার ও, থুরি এটা অনিকার হবে।
Comments